বিশেষ প্রতিনিধি:-
খুলনা শেখ পরিবারের আস্থাভাজন থলিদার ও জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবে ছাত্রজনতার উপর বর্বারচিত হামলাকারী পাইকগাছা পৌর তরুন লীগের সভাপতি হওয়ার পরেও বহাল তবিয়তে সকল কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন মিনারুল ইসলাম।
আওয়ামী স্বৈরশাসনের পুরো সময়কালে জিরো থেকে হিরো বনে যাওয়া মিনারুল এখনো প্রকাশ্য প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে দেদারছে যা খুশি তাই করে যাচ্ছেন। টাকা হলে নেতা ও প্রশাসনকে পকেটে রাখা যায় পূর্বে দেওয়া মিনারুলের বক্তব্য কি তাহলে বাস্তবেও রুপ নিলো? কোন নেতা তাকে আশ্রয় দিচ্ছেন। কার ছত্র ছায়াতে এখনো মাঠ কাঁপাচ্ছে এক সময়ের কাঠ বিক্রেতা মিনারুল এমন প্রশ্ন এখন ঝড় তুলছে পাইকগাছার চায়ের দোকান গুলোতে।
মিনারুল ইসলামের কর্মকান্ড অনুসন্ধানে করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে চমকপ্রদ সব তথ্য। একসময় নুন আনতে পানতা ফুরানো দশা থেকে আজ শত শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক মিনারুল পাইকগাছা পৌর সভার ৯ নং ওয়ার্ডের মৃত আজি রহমানের ছেলে।
পাইকগাছার জনগণের দীর্ঘ দিনের দাবি টোল ফ্রী শিববাটি ব্রীজের সাব ইজারাদারও এই মিনারুল। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার পর থেকে মিনারুলে ভাগ্যর চাকা ঘুরতে শুরু করলেও পাইকগাছা-কয়রার রাঘববোয়াল খ্যাত সাবেক এমপি আক্তারুজ্জামান বাবুর সময় ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয় মিনারুলের। এমপি বাবুর হাত ধরে খুলনার শেখ পরিবারের সাথে পরিচয় ঘটে তার। এরপরের ইতিহাস শুধুই নামে বেনামে সম্পদ গড়ার।
কয়রা-পাইকগাছায় শেখ সোহেল ও শেখ রুবেলের বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসার দেখভালের দায়িত্ব এসে পড়ে মিনারুলের কাধে। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে উঠেন শেখ বাড়ির আস্থাভাজন থলিদার। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে পাইকগাছার রাড়ুলী ইউনিয়নে বিভিন্ন ব্যক্তির জমি জোরপূর্বক দখল করে গড়ে তুলেছেন মেসার্স এস এম এম ব্রিকস নামের ইট ভাটা। কোনরুপ আইন ও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে জনবসতি পূর্ণ এলাকায় কোটি কোটি টাকা ব্যায় করে গড়ে তুলেছেন আয়শা ফুড প্রোডাক্ট নামের বিশাল এক বেকারি। এমটাই অভিযোগ করেছেন সয়ং এলাকাবাসী।
শিববাটি ব্রীজের সাব ইজারাদার হিসেবে কামাচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। তার নেতৃত্বে টোল আদায়ে অনিয়ম আর জনগণের সাথে অশোভন আচরণ করা যেন তাদের নিত্যদিনের খেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেখ পরিবারের আস্থাভাজন হওয়ার কারনে প্রশাসন থেকে পাবলিক তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পায়নি কেউ। আর এই সুযোগে তিনি নামে বেনামে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। ৯ নং ওয়ার্ডে সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পাশের গলিতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে গড়ে তুলেছেন আলিশান বাড়ি। আর এই বাড়িতে বসেই এখনও চলে আওয়ামী লীগ সহ অঙ্গ সংগঠনের গোপন বৈঠক।
অন্যদিকে সরকারি বিধি মালা অনুযায়ী কাঠ পুড়ি ইট ভাটা চালানোর উপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বিন্দুমাত্র থোড়ায় কেয়ার করতেন না তিনি। ইচ্ছে মত কাঠ ব্যবহার করে ভাটায় ইট তৈরী করেন বলেও ভাটায় কর্মরত শ্রমিকরা নিশ্চিত করেছেন।
বিশেষ করে গত বছরের জুলাই-আগষ্টে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার পতন আন্দোলন চলাকালে ৪ আগষ্ট পাইকগাছা জিরো পয়েন্টে অবস্থানরত ছাত্রজনতার উপর হামলাকারী নেতৃত্ব দেন এই মিনারুল।
বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানা গেছে, সরকার পতনের পর কিছু দিন আত্মগোপনে থাকলেও অল্প কিছু দিন গেলেই পাইকগাছায় গুটি কয়েক নেতাকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে প্রকাশ্যে আসেন মিনারুল।
দু'দফা শিববাটি ব্রীজের টোল প্লাজা ছাত্র জনতা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিলেও কিছু নেতাদের নিয়মিত ভাগা দেওয়ার শর্তে ম্যানেজ করে অল্প কিছু দিনের মধ্যে আবারও টোল আদায় শুরু করেন বলেও নিশ্চিত করেছেন সূত্রটি।
এছাড়াও সূত্রটি আরও জানায়,চলতি বছরের ২০ এপ্রিল খুলনায় জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ঝটিকা মিছিল হয়েছে। ঝটিকা মিছিলের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে আর এই মিছিল আয়োজনে মোটা অংকের অর্থ সরবরাহ করেন এই মিনারুল।
এছাড়া সূত্র আরও জানায় আওয়ামী লীগের নৌকার টিকিটে খুলনা ০৬ আসন থেকে সর্বশেষ নির্বাচনে এমপি হওয়া রশীদুজ্জামান মোড়লের সাথেও তিনি গড়ে তোলেন সখ্যতা। রশীদুজ্জামান মোড়লের নির্বাচনে যেকয়জন ডোনার ছিলো তারমধ্যে মিনারুল ইসলাম অন্যতম।
এবিষয়ে পাইকগাছা উপজেলা যুবদল নেতা আবু হুরায়রা বাদশা বলেন,ছাত্রজনতার উপর প্রকাশ্য হামলার নেতৃত্ব দানকারী মিনারুল কিভাবে এখনো দাপট দেখিয়ে বেড়াচ্ছেন। অনতিবিলম্বে তাকে গ্রেফতার করে বিচারের কাঠ গড়ায় তোলার দাবি করেন তিনি।
পাইকগাছা পৌর ছাত্রদলের আহবায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জিয়া হল শাখা ছাত্রদলের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক হাফিজ আল জাবির লিপু প্রতিবেদককে বলেন, মিনারুল ইসলামের মত আওয়ামী লীগের দোসর, ছাত্রজনতার উপর হামলাকারী এখনো কাদের শেল্টারের পাইকগাছায় বহাল তবিয়তে তাদের মুখোশ উন্মুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি অনতিবিলম্বে তাকে আটক করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
অপরদিকে এবিষয়ে মিনারুল ইসলামের কাছে জানার জন্য তার মুঠোফোনে কয়েক দফা রিং দেওয়া হলেও রিসিভ হয়নি।
0 Comments